একটু বিস্তারিত বলার ক্ষুদ্র চেষ্টাঃ
আব্বাসীয় বংশের পঞ্চম খলিফা হারুনুর রশিদ। বাগদাদে তিনি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিবেন। কিন্তু কাকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়া এ নিয়ে তিনি তার সভাসদদের সাথে পরামর্শ সভা করলেন। সবাই এক বাক্যে বললো, " ওহাব ইবনে উমার অর্থাৎ বহলুলের চেয়ে এই পদের যোগ্য আর কেউ নেই।
তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "ফকীহ সাহেব!! আপনাকে আমার প্রধান বিচারপতি বানাতে চাই। এত বড় পদে বসতে নিশ্চয়ই আপনার আপত্তি নেই।"
বহলুল খলিফার এ প্রস্তাবে মোটেই রাজি ছিলেন না। কারন তিঁনি জানতেন, জালিম শাসকের অধীনে এ ধরনের কোনো দায়িত্ব খেয়ানত ও গোনাহ'র ক্ষেত্র তৈরী করতে পারে।
তাছাড়া কোনো জালিম শাসককে সহযোগিতা করার পক্ষপাতি তিনি ছিলেন না।
তাই তিঁনি বললেন, " মাননীয় খলিফা, আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহন করতে পারছি না। কারন আমি নিজকে এ কাজের যোগ্য মনে করি না।"
খলিফা বললেন, " কিন্তু বাগদাদের লোকেরাতো আপনাকেই এই কাজের জন্য সবচেয়ে যোগ্য মনে করে। তাদের পরামর্শেই তো আমি আপনাকে ডেকেছি।"
বহলুুল বললেন, না, না তারা ঠিক বলেনি।
কিন্তু খলিফা বহলুলকেই বিচারপতি বানাবেন। উপায়ন্তু না দেখে বাঁচার জন্য বহলুল পাগলের বেশ ধারন করে মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়াতেন।
খলিফা বুজতে পারলেন, বহলুল নিজে থেকে পদটা এড়িয়ে গিয়ে দ্বীনকে রক্ষার জন্য পাগলের বেশ ধারন করছেন।
খলিফা হারুনুর রশিদ তার বেগম জোবায়দা ও পাইক-পেয়াদা প্রহরীসহ ভ্রমনে বের হলেন। হঠাৎ বহলুল খলিফার দিকে ছুটে আসলো। প্রহরীরা তাকে আটকলেন।
খলিফা অনুমিত দিয়ে বললেন, বহলুল আসো আমার কাছে।
অনুমতি পেয়ে কাছে এসে বললোঃ
বহলুলঃ বেহেশত কিনবে?
খলিফাঃ দাম কত?
বহলুলঃ লাখ টাকা
খলিফাঃ কোথায় তোমার বেহেশত?
এসময় বহলুল হিজিবিজি আঁকা একটি মলিন কাগজ বাদশার সামনে তুলে ধরল। কাজগটি দেখে অবজ্ঞার হাসি হেসে খলিফা বললোঃ বহলুল, পাগলামির আর সময় পেলে না!!
বহলুল সরে গিয়ে এবার কাগজটা বেগমের কাছে ধরল। বেগম কোনো কথা না বলেই গলা থেকে হীরার হার খুলে বহলুলকে দিল। বহলুল হারটি নিয়ে চলে গেলো।
রাজপুরীতে পৌছে খলিফা বেগমকে বললো, কতটা বোকা হলে লাখ টাকার হীরার হার দিয়ে একটা পচা কাগজ কেউ কিনতে পারে?
বেগম বললেনঃ আমি বেহশত কিনেছি।
খলিফাঃ বহলুল একটা পাগল। আর তুমি তারচেয়েও বড়!
বেগমঃ কিন্তু আমি তাকে সত্যবাদী বলেই জানি।
খলিফাঃ ও একটা বড় বাটপার!
বেগমঃ কিন্তু আমি তাকে সরল বিশ্বাসে হার দিয়েছি। আল্লাহ আমার দিল দেখবেন।
খলিফাঃ তোমরা মেয়েরা যে কি আজব!!
মেয়ে লোকের বুদ্ধির এই হলো বহর। কথা বলে লাভ নেই!
রাজপুরীতে হাহাকার!!!
বেগম জোবাইদা মারা গেছেন
খলিফা কাঁদছেন....
সমাহিত হলো বেগম...
রানির মুখখানি শেষবারের মত দেখতে চাইলেন খলিফা
কবরে নামলেন।
কবরে লাশ নেই!
আছে বড় সুড়ঙ্গ।
সুড়ঙ্গ পথে এগিয়ে দেখলেন এখানে যেন এক বেহেশতি উদ্যান!
এমন মধুর বাতাস ও পাখিদের মিষ্টি কলতান!
কিন্তু জোবাইদা কোথায়??
সামনে এক বালাখানা।
আর তারই এক জানালায় দেখা গেল বেগমকে। বেগম তার দিকে চেয়ে আছেন। খলিফা দৌড় দিয়ে ঢুকতে চাইলে ঐ প্রাসাদে। কিন্তু দারোয়ান বাধা দিল।
খলিফার রাগ হল।
তবুও খলিফা অনুনয় বিনয় করে বললেনঃ আমার সব রাজত্ব তোমায় দিব, আমাকে আমার বেগমের কাছে যেতে দাও।
দারোয়ান কর্নপাতও করলো না। খলিফা কেঁদে দিয়ে বললোঃ জোবাইদা, আমাকে ভেতরে নিয়ে যাও।
জোবাইদা বললোঃ এটা সেই বেহেশত যা আমি হারের বদলে কিনেছি। এখানে অন্যের আসার অধিকার নেই।
খলিফা কাতরভাবে কেঁদে উঠলেন।
ঘুম ভেঙ্গে গেল।
পাশে রানিও ঘুমে।
খলিফার বালিশ চোখের পানিতে ভিজে আছে।
ভোরে দরবারে এসে খলিফা প্রথমেই নির্দেশ দিলেন বহলুলকে দরবারে হাজির করতে।
বহলুল আসলো।
খলিফা বললেনঃ এসো বহলুল, এসো! আমার পাশে বসো।
বহলুলঃ কি গো খলিফা! কি জন্য ডেকেছ? গর্দান নিবে নাকি? তোমাদের তো ওই একটাই কাজ!! হি হি হি হি.......
খলিফাঃ না বহলুল! তুমি বেহেশত বিক্রি করবে? ( বিনয় সুরে)
বহলুলঃ না গো না! তোমার বাদশাহী দিলেও না!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন