গ্রামের নাম আটরশিঃ
গ্রামটি আউলিয়া কেরামের পূণ্যভূমি ফরিদপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি দূরে সদরপুর উপজেলায় অবস্থিত।
হিন্দু জমিদার থাকার কারনে তখনও আটরশি অঞ্চলে ইসলামী সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। মুসলমানগন পূজায় নতুন কাপড় পরিধান করে পূজা মন্ডপে যেতো, প্রসাদ নিতো আর ঈদের দিন লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে মাঠে যেতো।
১৯৩৮ সালের প্রথম দিকে বন্ধুর আমন্ত্রনে একজন মাওলানা ছাহেব আসলেন এই অঁজপাড়া গায়ে।
ক'দিন পরেই ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা মুসলমানগনের জন্য মহা উৎসবের দিন। কিন্তু ঈদের দিন সকালে এই গ্রামে কোন সাড়া শব্দ নেই। নেই ঈদের কোন আমেজ। প্রতিদিনকার মতো সবাই কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে জমিতে যাচ্ছে।
মাওলানা ছাহেবতো অবাক!
এত বড় উৎসবেও তাদের মনে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। অতঃপর মাওলানা ছাহেব লাঙ্গল কাঁধে একজন চাষীকে ডাকলেন।
জানতে চাইলেন ঈদের দিনে নামাজ না পড়ে জমিতে যাচ্ছে কেন?
চাষী জবাব দিলেন, এখানে কোন দিন ঈদের নামাজ হয় না, কোন ঈদগাহ ও নেই, কোন মসজিদও নেই, নেই কোন উদ্যেগী মুসলমান। তাই ঈদের নামাজ অামাদের কাছে রীতিমতো অপরিচিত।
মাওলানা ছাহেব অস্থির হয়ে উঠলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, চাষীকে নিয়েই ঈদের নামাজ পড়বেন।
ভিনদেশী মাওলানা ছাহেব, চাষী, মাওলানার ছাহেবের বন্ধুসহ আরো দুই জন মোট পাঁচজন কে নিয়ে এই অঞ্চলে প্রথম ঈদুল আযহার পবিত্র নামাজ আদায়। করলেন। তিঁনি নিজেই ইমামতি করলেন।
নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বললেন, " হে খোদা, আপনি এই গোনাহগারদের দোয়া কবুল করেন এবং এই অঞ্চলের মুসলমানদের ইসলামের মূল মন্ত্র বোঝার তৌফিক দান করেন। সত্য ইসলাম কি তা' তাদের জানতে ও বুজতে দিন।"
এই মাওলানা ছাহেবই হচ্ছেন বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব।
১৯৪৮ সালে আপন পীর খাজা এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নির্দেশে স্থায়ীভাবে এই গ্রামে বসবাস শুরু করেন। ৮ (আট) টাকা দিয়ে একটা কুঁড়েঘর ক্রয় করেন।
ঘরটার নাম দেন ''জাকের ক্যাম্প"। এই ঘর থেকেই খোদাতালাশীদের খোদাপ্রাপ্তিতত্ব জ্ঞান শিক্ষাদান শুরু করেন।
তারপর সময় যেতে এই গ্রামের নাম ফরিদপুর জেলা সাথে পাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়লো,
৭০'র দশকে সারাদেশে,
৮০'র দশকে সারা বিশ্বে, সারা বিশ্বের নামি-দামী সকল গনমাধ্যমে, সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে, এই গ্রামের নাম ছড়িয়ে পড়লো।
খোদাতালাশীগন খোদাতায়ালার প্রেমের অমীয় সুধা পানের অাশায় এখানে আসতে থাকলো। প্রথমে শত শত, তারপর হাজার হাজার নির্দিষ্ট একটা সময়ে লাখ লাখ মানুষের বাঁধ ভাঙ্গা স্রোত আসে এই গ্রামে।
গ্রামে বিদ্যুৎ আসলো, সভ্যতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করলো। তিঁনি এই গ্রামে প্রতিষ্ঠা করলেন সুবিশাল হাসপাতাল, উচ্চতর মাদ্রাসা, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ব্যাংক, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ডাকঘর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ঈদের দিন মুনাজাত কবুল হলো আর আজ সেই অঁজপাড়া এই গ্রামটি একটা উপশহরের মত।
গ্রামে আসতে শুরু করলো ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতগন। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপি, আমলা সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ। এই গ্রামের পাঠশালা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে কেউ হলেন জাতীয় মসজিদের খতিব। এই গ্রামের মহান সূফী সাধকের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহন করে মানুষের সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তন হতে লাগলো যা এখনও বর্তমান।
কালের বিবর্তনে এই গ্রামে দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এই গ্রামেই পবিত্র নগরী "মিনার" পরে ২য় বৃহত্তম কোরবানী অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রামটি সারা দুনিয়ায় "আটরশি পাক দরবার শরীফ" নামে পরিচিত আর এই গ্রামের মহান সূফী সাধক "আটরশির পীর" নামে পরিচিত।
এই গ্রামে জন্মগ্রহন করেন বর্তমান যামানার হাদী, সুলতানুল আরেফীন হযরত খাজা মিয়া ভাইজান মুজাদ্দেদী ছাহেব এবং জাকের পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান হযরত খাজা মেঝো ভাইজান মুজাদ্দেদী ছাহেব।
আজ এই গ্রামটি সূফীবাদের আধ্যাত্নিক রাজধানী
"বিশ্ব জাকের মঞ্জিল" হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন