| | বঙ্গাব্দ

আমানত

আমানতঃ

আমানত

 " তুলিতে নারিল আসমান আমানত ভার

            পড়িল ন্যস্ত তার দাও ভাগে পাগলার"


অর্থাৎ 'আমানত' যা আসমান জমিন গ্রহন করতে সাহস পেলোনা তার দায়িত্ব পড়ল পাগলার কাধে। এখানে লেখক পাগলা বলতে মানুষকে বুজিয়েছেন। আমানত খুবই সাংঘাতিক ব্যাপার। 


আমানতঃ


আল্লাহ পাকের গুনাবলির প্রতিবিম্ব যাহা মানুষকে প্রদান করা হইয়াছে তাহাই আমানত। এই আমানত মহান খোদাতায়ালাকে পুনরায় ফেরত দিবে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা কি আমানত মানুষ দিয়েছেন যা তিনি পুনরায় ফেরত চাইবেন।


আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করিয়া রুহ ফুকিয়া দিলেন। তারপর মানুষ কে তিনার (খোদার)

সিফাতে হায়াত থেকে জীবন

সিফাতে এলেম থেকে জ্ঞান-বিবেক

সিফাতে কুদরত থেকে ক্ষমতা

সিফাতে এরাদত থেকে ইচ্ছা শক্তি

সিফাতে ছামাওয়াত থেকে শ্রবন শক্তি

সিফাতে বাছারাত থেকে দশর্ন শক্তি

সিফাতে কালাম থেকে কথন শক্তি

সিফাতে তাকবিন থেকে সৃজন শক্তি প্রদান করছেন। (সিফাত অর্থ গুন)। 


কাজেই এই চিন্তন, দর্শন, শ্রবন, কথন, বর্নন, সৃজন ইত্যাদি সমুদয় শক্তি আল্লাপাকের, মানুষের নয়। মানুষকে এই গুনাবলি সমূহ আমানত বা ধার হিসাবে দেয়া হয়েছে। যা সময় মত ফেরত নেয়া হবে। 


এইসব সিফাত বা গুনাবলি মানুষের কর্মোন্দ্রীয়সমূহের মধ্যে  জিহ্বা,  চক্ষু, কর্ণ,হস্ত পদ এবং কালব অন্যতম। 


জিহ্বাঃ 

               জিহ্বা দ্বারা মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। আল্লাহর নির্দেশিত পথে যদি জিহ্বাকে ব্যবহার করা যায় তবেই কল্যান আর যদি জিহ্বাকে সংযত রাখা না যায় তবে ইহা ধ্বংসের কারন। হযরত শেখ সাদি (রহঃ) বলেন, " তোমার কথা আদন এর মুক্তার চেয়েও যদি মূল্যবান হয় তথাপিও তুমি যদি বেশি কথা বল, তবে তোমার দেল মারা যাইবে। দেল অন্ধকার আচ্ছন্ন হইবে। আমরা বেশি কথা বলতে বলতে এক সময় মিথ্যা কথা বলে ফেলি, মিথ্যা বলা মহা পাপ। 


মহা কবি হাফেজ বলেন,

           "যে দিল করুনা করি রসনা ললিত

             কেনরে না গাও তার মহিমার গীত।"


যিনি আমাকে এত সুন্দর জবান দান করছেন তিনাকে না ডেকে আমরা আজ বেহুদা, বাজে কথায় লিপ্ত অথচ অামাদের উচিত এই জবান দিয়ে মহান খোদাতায়ালাকে ডাকা।


চক্ষুঃ

            " যে দিল করুনা করি যুগল নয়ন

               উচিত কি নয় তার রুপ দরশন"


চক্ষু দ্বারা মানুষ দর্শন করে যাহা দেখে তাহার প্রভাব দেলের উপরে পড়ে। মানুষকে খোদা তায়ালা একটি চক্ষুর পরিবর্তে দুইটি চক্ষু দান  করছেন সেই মহান খোদাতায়ালার সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য। সেই মহান খোদাতায়ালাকে দেখিবার চেষ্টা করার জন্য, নিষিদ্ধ বস্তুর উপর দৃষ্টিপাতের জন্য নয়।


কর্নঃ

         মানুষ যাহা কিছু শোনে তাহার প্রভাব মনের বা দেলের উপর পড়ে। মানুষ যখন আল্লাহ রাসূলের কথা শুনে তখন চোখে পানি আসে ঠিক তেমনি যখন আজে বাজে কথা শুনে তখন মানুষের দেলে অশুভ প্রভাব পড়ে। গান-বাজনা শুনিলে কালব দুনিয়া মুখী হয়। কালবে দুনিয়ার প্রেম বৃদ্ধি পায়। আর দুনিয়ার মহব্বতই যাবতীয় পাপের কারন। 


কালবঃ 

         কালব বা অন্তর হলো মূল ইন্দ্রিয়।  কালব পবিত্র হইলে কোন ইন্দ্রীয় দ্বারাই আর পাপ সংঘটিত হয় না। কালব বা অন্তর হলো দেহ রাজ্যের বাদশাহ আর বাকি সকল ইন্দ্রিয় এই রাজ্যের প্রজা। বাদশাহ যাহা নির্দেশ দেন প্রজাবৃন্দ তাহাই করেন। বাদশাহ যদি আল্লাহর অনুগত হয় প্রজাবৃন্দও আল্লাহর অনুগত হবে। খেয়াল করে দেখতে হবে কালব কি আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত ছিলো নাকি দুনিয়াবী চিন্তায় লিপ্ত ছিলো। যদি দুনিয়াবী চিন্তায় মশগুল থাকে তবে খোদাপ্রাপ্তির আশা বৃথা।


জীবন, জ্ঞান-বিবেক,ক্ষমতা, ইচ্ছাশক্তি, শ্রবন শক্তি, দর্শন শক্তি অর্থাৎ জিহ্বা, চক্ষু, কর্ন, হস্ত-পদ ও অন্তর মহান খোদাতায়ালা আমাদেরকে আমানত হিসাবে দান করছেন। এগুলোর খেয়ানত করা হলে বিচার দিবসে পুংখানো পুংখ হিসাবে দিতে হবে।


এই রমজান মাস "আমানত" রক্ষার উপযুক্ত সময়। আমরা যদি রমজানে "আমানত" রক্ষা করতে ব্যর্থ হই তবে সারাদিন শুধু অভুক্ত বা তৃষ্ঞার্ত ই থাকলাম।


তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে একটি বার সবাই চিন্তা করে দেখি মহান খোদাতায়ালা তিনার যে সকল গুন সমূহ আমাদেরকে আমানত হিসাবে দান করলেন সেগুলোর কত টুকুর আমানত আমরা রক্ষা করলাম।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন