পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী (সাঃ) আসলেই একশ্রেনীর জ্ঞানপাপী মানুষ বলতে শুরু করে ১২ ই নবীর বেছালতের দিন এই দিন আনন্দ করা যাবে না। তারা মুলত মিল্লাদুন্নাবী (সাঃ) অস্বীকার করে সাধারন মানুষকে ধোঁকা দিতেই এই কথা বলে প্রতারনার আশ্রায় নেয়।
যারা এইরুপ মন্তব্য করে তাদের জন্য কিছু কথা
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ মোল্লা আলী কারী (রহঃ) বলেন,
"হুযুর (সাঃ) উনার জন্য মৃত্যুও নেই, নিঃশেষ হওয়াও নেই। বরং এক শান মুবারক হতে অন্য শান মুবারক তিঁনার দিকে স্থানান্তরিত হওয়া এবং এক ঘর হতে অন্য ঘরে হিজরত করা। নিশ্চিত বিশ্বাস এই যে, নূরে মুজাসসাম হযরত রাসূল (সাঃ) তিনি হায়াত মুবারকে (জীবিত) আছেন এবং সম্মানিত রিযিক প্রাপ্ত হচ্ছেন"। - মিরকাত শরীফ
"নবীগন কবরের মধ্যে জীবিত, উনারা সালাত আদায় করেন"।
- হায়াতুল আম্বীয়া লিল বাইহাকী
বিখ্যাত ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন,
"হযরত আম্বিয়া (আঃ)গন আমাদের থেকে পর্দা করে যান আমরা উনাদেরকে দেখি না যদিও উনারা যিন্দা আছেন"।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) হইতে বর্নিত,
"নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত রাসূল (সাঃ)-র জিসম মুবারক যমীনের উপর ভক্ষন করা হারাম করছেন। সুতরাং তিনি জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত"।
- ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরীফ
ওহাবি-দেওবন্দীদের মুরুব্বি মাসিক মদিনার সম্পাদক মাহিউদ্দিন তার কিতাব "স্বপ্নযোগে রাসূল (সাঃ)" এর ৬৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,
"হযরত আবুল মাওয়াহেব শাযালী রহঃ বনর্না করেন, একবার স্বপ্নযোগে হুযুর (সাঃ)-র সাক্ষাতলাভ করলাম। তিঁনি [রাসুল (সাঃ)] নিজের সম্পর্কে বললেন, "আমি মৃত নই। যারা আল্লাহর দেয়া রূহানী জ্ঞান রাখে, তাদের মধ্যে আমি জীবিতই রয়েছি, আমি তোমাদের দেখতে পাই"।
এবার একটু বিশ্লেষন করা যাক
আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন মাজীদে ফরমান,
"আমি আপনাকে সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতি রহমত রূপে প্রেরন করেছি"। - সূরা-আম্বিয়াঃ ১০৭
আল্লাহ রাসূল (সাঃ)কেঁ সমস্ত সৃষ্টির রহমত রূপে প্রেরন করেছেন। যদি তিঁনি মৃত হতেন ( নাউযুবিল্লাহ) অথবা অন্য মানুষদের মত মারা যেতেন তবে সৃষ্টির উপর রহমতের ধারা বন্ধ হয়ে যেতো। যেহেতু সমস্ত সৃষ্টির উপর রহমতের ধারা চলমান সেহেতু তিনি রওজা মোবারকে জিন্দা।
রাসূল (সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি আমার দেহত্যাগের পর আমার জিয়ারত করলো সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার জিয়ারত করলো"। অথার্ৎ তিঁনি সব সময়ই বরকতময়। আলোচ্য হাদিস প্রসঙ্গে হযরত ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, "নবীর কবর যিয়ারত করছি, কথাটি বলা ঠিক নয় বরং মাকরূহ। তার পরির্বতে আমাদের বলা উচিত, " আমি হুজুর পাকের যিয়ারত লাভ করেছি"।
হযরত রাসূল (সাঃ) ফরমান, "কোন ব্যক্তি যখন আমার প্রতি সালাম পেশ করে আমি সালামের জবাব প্রদান করি"।
- সুনানে আবু দাউদ শরীফ
এই হাদিসের আলোকে আমরা বলতে পারি পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে কেউ না কেউ নামাজ পড়ছে, রুকু করছে, সেজদা করছে, তাশাহুদের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ)-র প্রতি দুরুদ ও সালাম পেশ করছে। যিনি প্রতি মুহুর্তের সালামের জবাব দিচ্ছেন তিনি কি করে মৃত হতে পারেন। নিঃসন্দহে তিনি রওজা মোবারকে জীবিত।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) বর্নিত হাদিস শরিফ থেকে আমরা দেখেছি দয়াল নবীর পবিত্র দেহ মোবারক ভক্ষন করা মাটির জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। ( উপরে হাদিস খানা বর্ননা করা হয়েছে)
মাটি আল্লাহপাকে এমন সৃষ্টি যা যে কোনো জৈব পদার্থকে গলিয়ে পচিয়ে মাটি করে ফেলে। মাটি কখনো কোনো জীবন্ত প্রানীকে মাটিতে পরিনত করতে পারে না। যেমন মাটির মধ্যেই অনেক জীবানু, ব্যাকটিরিয়া আবার মাটির গর্তে সাপ, ব্যাঙ্গ ইদুর থাকে। মাটি কিন্তু তাদের কে গলাতে পারে না কারন এগুলো জীবন্ত। অন্যদিকে আমরা যখন কাউকে মাটিতে কবর দেই তখন কিন্তু একটা নিদির্ষ্ট সময় পর শরিরের অবশিষ্ট কিছু থাকে না কারন সে প্রানহীন। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আমার প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি রওজা মোবারকে জীবিত কারন তিনি হায়াতুন্নাবী।
সহীহ বুখারিতে এই প্রসঙ্গে এক খানা হাদিস বর্ননা করা হয়েছে, "আল্লাহপাক জমিনের জন্য নবীদের শরির বিনষ্ট করা হারাম করেছেন"।
আমার প্রিয় নবী যে এখনও জিন্দা তাঁর প্রমান কালেমা তাইয়্যেবা "লাইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" অর্থাৎ- আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তিনার প্ররিত রাসূল"।
ধরুন আমি সুজন শাহজী আজ এই কালেমা পড়ে মুসলমান হলাম। আমার জন্য "আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই" এই অংশ টি বর্তমান কাল ( Present Tense) সেই সাথে তিনার প্রেরিত রাসূল ও বর্তমান কাল। আমরা ভালোভাবেই জানি যে মৃত ব্যক্তির জন্য অতীত কাল ব্যবহার করা হয় আর জীবিতের জন্য বর্তমান কাল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমার দয়ালের ক্ষেত্রে অতিত ব্যবহার করা হয় নি। আদম (আঃ) যখন মাটি পানি মিশ্রিত তখনও তিঁনি রাসূল।
উপরোক্ত বিষয়াদি থেকে প্রমানিত হয় আমার রাসূল (সাঃ) হায়াতুন্নাবী - জিন্দানবী, তিনি রিযিকপ্রাপ্ত, তিনি সালাত আদায় করেন, তিনি সালামের জবাব দেয়।
কিছু মহল কোরআন মাজিদ ও হাদিস শরিফের এই বর্ননাগুলোর খেলাপ করে, আর এই খেলাপ করাটা কুফরির মত। তাদের এই রূপ বক্তব্য শুনে আমার মনে তাদের রাসূল (সাঃ)-র প্রতি মহব্বত নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
তাই আমার পীর কেবলাজান বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেব ফরমান,
"যার অন্তরে দয়াল নবীর মহব্বত যতটুকু তার ঈমানও ততটুকু।"
আসুন এই বিভ্রান্তি ভূলে ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিল্লাদুন্নাবীতে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে আমার পীর কেবলাজানের প্রতিষ্ঠিত দরবার শরীফ সূফিবাদের আধ্যাত্নিক রাজধানী বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবী (সাঃ) উদযাপন করি। আল্লাহ পাক আমাদের সেই তৌফিক দান করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন