| | বঙ্গাব্দ

খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবনী

হযরত শাহ্সূফী ফরিদপুরী (কুঃছেঃঅাঃ) পীর কেবলাজান ছাহেব জামালপুর জেলার অন্তর্গত শেরপুর থানার পাকুরিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও সঙ্গতি সম্পর্ন পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।
খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ) ছাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবনী

শিশু বয়সেই তিনি মাতৃহারা হন। তাঁহার বাবা শাহ্ আলীমউদ্দিন ছাহেব এবং তাঁহার দাদী মাতৃহারা এই শিশুকে অপরিসীম ভালবাসা ও স্নেহ দিয়া প্রতিপালন করেন।
তাঁহার বয়স যখন পাঁচ/ছয় বৎসর তখন নোয়াখালী জেলার সুযোগ্য অালেম ও সূফী মাওলানা শরাফত অালী ছাহেবের নিকট তাঁহার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন শুরু হয়। জনাব শরাফত অালী ছাহেব অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ভবিষ্যতের এই মহান তাপসকে আরবী ও ফারসী ভাষা শিক্ষা দিতে থাকেন। অত্যন্ত মেধাবী এই বালক অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আরবী এবং ফারসী ভাষা অায়ত্ত করিয়া ফেলেন।
হযরত শাহ্সূফী ফরিদপুরী (কুঃছেঃঅাঃ) পীর কেবলাজান ছাহেবের বয়স যখন দশ বৎসর, তখন তাঁহার আব্বাজান তাঁহাকে বাংলা ও আসামের সর্বজনবিদিত মহান সূফী সাধক হযরত মাওলানা খাজা শাহ্সূফী ইউনুস অালী এনায়েতপুরী (কুঃ) ছাহেবের পাক দরবার শরীফে লইয়া যান এবং তাঁহার পাক কদমে তাঁহাকে সমর্পন করেন। তখন হইতেই ভবিষ্যতের এই মহান সূফী সাধকের সাধনা জীবন শুরু হয়। তিনি এই অল্প বয়স হইতেই তাঁহার পীরের খেদমতে সম্পূর্ণ রূপে অাত্ননিয়োগ করেন। হযরত খাজা এনায়েতপুরী (কুঃ) তাঁহাকে শরীয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারেফাতের শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলেন। হযরত শাহসূফী এনায়েতপুরী (কুঃ) হযরত পীর কেবলাজানকে অত্যন্ত স্নেহ করিতেন ও তিনিও তাঁহার পীরের সেবায় নিজকে উৎসর্গ করিয়া অানন্দ লাভ করিতেন।
সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসরকাল এইভাবে অাপন পীরের খেদমতে থাকাকালে তাঁহাকে অপরিসীম দুঃখ ও ত্যাগ তিতিক্ষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে হয়। পরবর্তী সময়ে পীরের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁহাকে কিছুকাল কলিকাতায় অবস্থান করিতে হয়। কলিকাতায় তিনি ৬নং হায়াত খান লেনে প্রফেসর সানাউল্লাহ ছাহেবের বাড়ীতে অবস্থান করিতেন।
এই সময়ে অধ্যাপক ছাহেবের এক প্রিয় বন্ধু ফরিদপুর নিবাসী জনাব মুহসীন উদ্দিন খান ছাহেবের সঙ্গে হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃঅাঃ) পরিচিত হন। তখন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যময় স্বপ্নের তাবীর (ব্যাখ্যা) করিতে যাইয়া উক্ত মুহসিনউদ্দীন খান ছাহেবের সঙ্গে তাঁহার বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়। ইহার কিছুদিন পরে তিনি খান ছাহেবকে সঙ্গে লইয়া হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) এর দরবারে গমন করেন। মুহসীনউদ্দিন খান ছাহেবও খাজা এনায়েতপুরীর (রঃ) দরবারে অাত্ননিবেদন করেন এবং তাহার মুরিদ রূপে গৃহিত হন। ইহার পর জনাব মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেব হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃঅাঃ) ছাহেবকে লইয়া ফরিদপুরে তাঁহার নিজের বাড়ীতে যান।
ক্রমে তাঁহাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অারো গভীরতর হইতে থাকে। পরবর্তী পর্যায়ে হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) এর নির্দেশে হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) তাঁহার ভ্রাতুস্পুত্রীকে জনাব মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেবের নিকট বিবাহ বন্ধনে অাবদ্ধ করেন এবং হযরত খাজা এনায়েতপুরী ছাহেবের পরবর্তী নির্দেশে জনাব মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেব তাঁহার বড় ভাইয়ের কন্যাকে হযরত শাহ্সূফী ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের নিকট বিবাহ দেন। এই ভাবে তাঁহারা পরস্পর অাত্নীয়তার বন্ধনে অাবদ্ধ হন। বিবাহের বারো বছর পরে হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) ছাহেবের সহধর্মিনী ইন্তেকাল করেন। প্রথমা স্ত্রীর জীবদ্দশায় হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ) ছাহেবের বাতেনী নির্দেশে হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) জনাব মুহসীনউদ্দিন খান ছাহেবের অন্য এক ভাইয়ের মেয়েকে বিবাহ করেন। সুদীর্ঘ বত্রিশ বছর হযরত পীর কেবলাজানের খেদমত করার পর তিনিও ইন্তেকাল করেন।
এইখানে একটি কথা উল্লেখ্য যে, হযরত ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) তাঁহার পীরের নির্দেশ অনুযায়ী ফরিদপুর জেলায় অবস্থান করিতে থাকেন এবং তরিকায়ে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া প্রচার করিতে থাকেন। হযরত এনায়েতপুরী (রঃ) তাঁহাকে নির্দেশ দেন,
" তুমি ফরিদপুরে যাও, ফরিদপুর তোমার দাদা পীর সৈয়দ ওয়াজেদদ অালী (রঃ) ছাহেবের দেশ, সেই দেশে তুমি সত্য তরিকা প্রচার করিতে থাক।"
পীরের অাদেশ পালন করার জন্য হযরত পীর কেবলাজান ফরিদপুরে অাগমন করেন এবং মুহসীনউদ্দীন খান ছাহেবদেরই একটি ছোট ঘর লইয়া তথায় অবস্থান করিতে থাকেন এবং সত্য তরিকা প্রচারের কাজ শুরু করেন। যেই ঘরটিতে হযরত পীর কেবলাজান প্রথম বসবাস শুরু করেন, সেই ঘরটির নাম ছিল " জাকের ক্যাম্প"। এই জাকের ক্যাম্পই পরবর্তীকালে প্রসারিত হইয়া " বিশ্ব জাকের মঞ্জিল" নামে পরিচিত লাভ করে। বাংলা ১৩৫৪ সন হইতে হযরত পীর কেবলাজান সত্য তরিকা প্রচারের কাজ অারম্ভ করেন। তাঁহার একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় ও আধ্যাত্নিক অাকর্ষনে দলে দলে লোক সত্য তরিকায় দীক্ষিত হইতে থাকে। এইভাবে সুদীর্ঘ ৪৮ বৎসর প্রচারের পর সেই ক্ষুদ্র "জাকের ক্যাম্প" বিশ্ব জাকের মঞ্জিল রূপে বর্তমানে সংঘাত সংকুল পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ জাকেরানের একমাত্র অাশ্রয়স্থল এবং তরিকত শিক্ষা কেন্দ্র রূপে গড়িয়া উঠিয়াছে।
গ্রন্থ সূত্রঃ সংক্ষিপ্ত ওজিফা

 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন