| | বঙ্গাব্দ

উম্মতে মোহাম্মদীর ৭৩ ফেরকা

 

উম্মতে মোহাম্মদীর ৭৩ ফেরকা

হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) কর্তৃক প্রবর্তিত সত্য ধর্ম ইসলামের অনুসারী মুসলামানগন কয়েক বছর পর্যন্ত একটি দল বা ফেরকা হিসেবেই পরিচিত ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে আকীদাগত ত্রুটি- বিচ্যুতির কারনে মুসলিম জাতি বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হইয়া পড়ে। শিয়া, সুন্নী, রাফেজি, খারেজি, মোতাযেলা ইত্যাদি মোট ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হয়।
অবশ্য রাসূলে পাক (সাঃ) এই বিভক্তির পূর্বাভাস দিয়ে যান রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, "শুনিয়া রাখ, হযরত মুসা (আঃ) এর হেদায়েতের বিপরীতে বনি-ইসরাইল সম্প্রদায়ের মধ্যে ৭১টি ফেরকার সৃষ্টি হয়েচিলো তার মধ্যে মাত্র একটি দল ছাড়া বাকি গুলো পথভ্রষ্ট। হযরত ঈসা (আঃ) এর উম্মতের মধ্যে ৭২টি ফেরকার সৃষ্টি হয়েছে। আর তাহারও মাত্র একটি ছাড়া বাকি গুলো গোমরাহ ফেরকা ছিলো। কিন্তু আমার উম্মত তথা তোমাদের মধ্যে অভ্যুদয় ঘটিবে মোট ৭৩ টি ফেরকার। আর উহার মধ্যে একটি মাত্র দল ছাড়া বাকী সবগুলিই গোমরাহ ও বেদিন হইবে। কেবল ঐ একটি মাত্র দলই প্রকৃত মুসলামানরূপে গন্য হইবে। সাহাবীগন আরজ করিলেন, সেই দলটি কিরূপ হইবে? হুজুর (সাঃ) বলিলেন, "ঐ দলটি আমার ও আমার সাহাবীদের পথ অনুসরন করিবে"। আর এই দলটি ই বেহেশতী দল।"
আসুন ৭৩ টি দল সম্পর্কে জেনে নেইঃ
৭৩ টি ফেরকা মূলতঃ মূল দশটি ফেরকার শাখা প্রশাখা।
সেই দশটি ফেরকা হলঃ
✅১. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত
❌২. খারেজী
❌৩. শিয়া বা রাফেজী
❌৪. মোতাযেলা
❌৫. মারজিয়া
❌৬. মুশাব্বাহ
❌৭. জাহমিয়া
❌৮. জারারিয়া
❌৯. নাজ্জারিয়া
❌১০. কালাবিয়া
✅⭕১. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতঃ
রাসূলে পাক (সাঃ) ও সাহাবীদের (রাঃ) পথ অনুসরন কারিইগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত। যারা রাসূল (সাঃ) নূর মানে, মিলাদ-কিয়াম করে, রাসূল (সাঃ)কেঁ হাজের-নাজের মানে, হায়াতুন্নাবী মানে, ঈদে ই মিল্লাদুন্নাবী (সাঃ) পালন করে, শবে মেরাজ শবে বরাত পালন করে, হযরত রাসূল (সাঃ) এঁর নায়েব এই যামানার ওলী আল্লাহদের কে ইজ্জত করে তারাই এই দলভূক্ত। এরা ই নিঃসন্দেহে জান্নাতি।
⭕২. খারেজীঃ
আরবী ভাষায় যে বাহির হইয়া যায় তাকে খারিজ বলে। তাদের কে খারিজী বলার কারন হলো তারা হযরত আলী (রাঃ)-এর ভক্ত ও অনুসারিদের মধ্য হইতে বাহির হয়ে গেছে। রাসূল পাকে (সাঃ) তাদের সর্ম্পকে ভবিষ্যৎ বানী করেছিলেন, " উহারা দ্বীন হইতে এমন ভাবে বাহির হইয়া যাবে যেমন ভাবে ধনুক হইতে হঠাৎ তীর বাহির হইয়া যায়। উহারা আর কখনই দ্বীনে প্রত্যাবর্তন করিবে না"।
খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা কবর আযাব এবং হাওজে কাওছারকে বিশ্বাস করে না। রাসূল পাক (সাঃ)-এঁর শাফায়েতের উপরও আস্থা রাখে না তারা। তারা চাঁদ না দেখিয়া রোজা রাখে ও ঈদ করে। তারা সুদকে হারাম মনে করে না।
এই খারেজী সম্প্রদায় আবার পনেরটি দলে উপদলে বিভক্ত। দল উপদল গুলোর নাম হচ্ছেঃ
❌নাজরাহ
❌আরযাকাহ
❌ফাদাকিয়াহ
❌আত্বিয়্যাহ
❌উজারাওয়াহ
❌জামিয়াহ
❌মাজহুলিয়াহ
❌ছালাতিয়াহ
❌জাযিয়াহ
❌আখনিয়াহ
❌জাফরিয়াহ
❌বাহনামিয়াহ
❌শামরাখিয়াহ
❌বাদইয়্যাই
❌মালুমিয়াহ
⭕৩. শিয়া বা রাফেজি সম্প্রদায়ঃ
তারা হযরত আলী (রাঃ)-এর অনুবর্তীতার দাবি করে এবং তিঁনাকে সমস্ত সাহাবায়ে কেরামগনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ মনে করে। তারা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতকে অস্বীকার করিয়াছে। তাদেরকে রাফেজি বলার অন্যতম কারন হলো, একবার হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) কে নিয়া প্রশংসা করিলেন তখন কিছু লোক ইমাম ছাহেবকে ছাড়িয়া গেলো। আর যারা ছাড়িয়া গেলো তারাই রাফেজী।
শিয়া সম্প্রদায়ের মূল আকীদা সমূহ হলোঃ
❌১. হযরত আলী (রাঃ) ছাহেব রাসূলে করিম (সাঃ)-এঁর সমগ্র সাহাবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।
❌২. রাসূলে করীম (সাঃ) এঁর অবর্তমানে সর্ব প্রথম হযরত আলী (রাঃ) ই খেলাফতের ন্যায্য দাবিদার এবং এই পদে একমাত্র তাহারই অধিকার।
❌৩. শিয়ারা হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ) ও হযরত উসমান (রাঃ) ছাহেবদের গালি দেওয়া ধর্মীয় কর্তব্য বলিয়া মনে করে।
❌৪. তাহারা রাসূলে পাক (সাঃ) এর পরে হযরত আলীর হস্তে খেলাফতের বায়াত না হওয়ার কারনে ছয়জন সাহাবী ছাড়া অন্য সবাইকে মুরতাদ মনে করে।
শিয়া সম্প্রদায় ৩২ টি দলে উপদলে বিভক্ত যথাঃ
❌গালিয়া
❌যায়েদিয়া
❌রাফেজিয়া
❌বুনানিয়া
❌ত্বাইয়্যারাহ
❌মারছুরিয়াহ
❌মাগীরিয়াহ
❌খেতাবিয়াহ
❌মুআম্মারিয়াহ
❌আবজালিয়াহ
❌মুফজালিয়্যাহ
❌শারইয়্যাহ
❌খাবতিয়্যাহ
❌মাফুজিয়্যাহ
❌সোলায়মানিয়াহ
❌বাতরিয়্যাহ
❌ফাতিয়াহ
❌কেসানিয়্যাহ
❌জারুদিয়্যাহ
❌আমিরিয়্যাহ
❌মুহাম্মদিয়্যাহ
❌হুসাইনিয়া
❌বাদসাইয়্যাহ
❌ইসমাইলিয়া
❌কারামাতিয়্যাহ
❌মুবারাকিয়্যাহ
❌শামীতিয়্যাহ
❌আসাদিয়্যাহ
❌মাত্বমুরিয়্যাহ
❌মাওসুয়িয়্যাহ
❌ইমামিয়্যাহ
❌খাবারিয়্যাহ
⭕৪. মোতাযেলাঃ
এদের আকিদা এমন যে," আল্লাহ বান্দার সম্পর্কে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন বাসনা পোষন করেন, বাস্তবে যাহার বিপরীত হয়, ঠিক এই ভাবেই আল্লাহ বান্দার জন্য যে রুজী নিদির্ষ্ট করিয়াছেন, বান্দা সেই রুজির বদলে অন্য রুজি খায়"।
তাহাদের ধারন এমন যে, মৃত ব্যক্তিদের রূহের উপরে জীবিতদের দোয়া প্রার্থনা, দান- খয়রাত ইত্যাদির কোন কিছুই ছওয়াব বা তাছির পৌছে না। ( এমন ধারন পোষন করে আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফসহ উপমহাদেশের গোমটা পরা মৌলভীরা)
এই ফেরকা আবার ৬টি দলে উপদলে বিভক্ত হয়েছে যথাঃ
❌মুযলিয়্যাহ
❌নেজামিয়্যাহ
❌মুআম্মরিয়াহ
❌জামারিয়্যাহ
❌কাবিয়্যাহ
❌হাশমিয়াহ
⭕৫. মারজিয়াঃ
মারজিয়া ফেরকার আকিদা হলো তারা মনে করে "সাধারন লোকের ঈমান, নবী-রাসূলগনের ঈমান এবং ফেরেশতাদের ঈমান সবই এক বরাবর। ইহার মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য নেই, ব্যবধান বা কম-বেশি ও নেই।"
এই ফেরকাটি আবার ১২ টি ফেরকায় বিভক্ত হয়েছে, যথাঃ
❌জাহমিয়া
❌ছালেহিয়া
❌শামরিয়া
❌ইউনুসিয়্যাহ
❌ইউনানিয়াহ
❌নাজ্জারিয়াহ
❌গীলানিয়্যাহ
❌শবীতিয়্যাহ
❌হানফিয়্যাহ
❌মুআযিয়্যা
❌মারসিয়্যাহ
❌কারামিয়্যাহ
⭕৬. মুশাব্বাহঃ
এই ফেরকার আল্লাহ সম্পর্কে আকিদা হলো, আল্লাহতায়ালা অবিকল মানবের মত আকৃতি ও দেহধারন কারি। সে দেহে রক্ত মাংস আছে এবং ঐ দেহ ঠিক মানুষের মত হস্ত পদ চক্ষু কর্ন ও নাসিকাবিশিষ্ট।
এই ফেরকা তিনটি দলে বিভক্তঃ
❌হিশামিয়াহ
❌ওয়াসেমিয়াহ
❌মু ক্বাতালিয়া
⭕৭. জাহমিয়াঃ
জাহম ইবনে ছাফওয়ান নামক এক ব্যক্তির দ্বারা এই ফেরকার সূত্রপাত। তাদের আকিদা এমন যে, কোন বস্তু সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে আল্লাহ ঐ বস্তু সম্পর্কে কোন জ্ঞান বা খবর থাকে না বরং সৃষ্টির পরেই আল্লাহ উহার বিষয় সব কিছু জানেন ও খবর রাখেন"।
তাদের আর একটি আকিদা হলো, জান্নাত-জাহান্নাম উভয় অস্থায়ী। কোনটাই চিরস্থায়ী নয়।
⭕৮. জারারিয়াঃ
জারার ইবনে আমর নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে এই ফেরকার নাম করন করা হয়েছে। তাদের আকিদা হলো, প্রানীর রূহ ও দেহের মধ্যে কোনো পার্থক্য বা স্বাতন্ত্র্য নাই বরং এতদোভয়ের একটির সাথে অন্যটির গভির সম্পর্ক। একটির অবর্তমানে অন্যটির আশা করা যায় না।
⭕৯. নাজ্জারিয়াঃ
হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ নাজ্জার নামক এক ব্যক্তির দ্বারা এই ফেরকার সূত্রপাত।
⭕১০. কালাবিয়াঃ আবু আবদুল্লাহ ইবনে কালাব নামক ব্যক্তি দ্বারা এই ফেরকার উদ্ভব হয়। তাহাদের আকিদা এমন যে, আল্লাহ সবর্ত্রই বিরাজমান নয়।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়েতের আকিদার উপর প্রতিষ্ঠিত দরবার হচ্ছে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরিফ। দরবার শরীফের মহামহিম প্রতিষ্ঠাতা শাহসূফী হযরত মাওলানা খাজাবাবা ফরিদপুরী কুঃছেঃআঃ ছাহেব ফরমান, "তোমাদের জন্য সুখবর এই যে তোমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত। "

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন