| | বঙ্গাব্দ

সূরা ফাতেহা সম্পর্কে বিস্ময়কর কিছু তথ্য

 

সূরা ফাতেহা সম্পর্কে বিস্ময়কর কিছু তথ্য

সূরা ফাতিহা


সূরা ফাতিহার নাম ফাতিহা বা ফাতিহাতুল কিতাব এইজন্য রাখা হইছে যে, উহা অাল্লাহর কিতাব কুরঅান মাজিদের শুরুতে অবস্থিত এবং উহার দ্বারা সকল নামাজে কিরাত অারম্ভ করা হয়।


ইমাম মালেক (রহঃ) বনর্না করেন, " একদিন মসজিদে নববীতে হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) নামায অাদায়ের অবস্থায় রাসূল (সাঃ) তাহাকে ডাকিলেন। নামাজ শেষ করিয়া তিনি রাসূল্লাহ (সাঃ) এঁর নিকট উপস্থিত হইলেন। উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) তিঁনার হাত অামার হাতের উপর রাখিলেন। তখন তিনি মসজিদে হইতে বাহিরে যাইতেছিলেন। অামার হাতে হাত রাখিয়া তিনি বলিলেন, "অামি তোমাকে এইরুপ একটি সূরা অবহিত করিব যাহার সমতুল্য সূরা না তাওরাতে না ইনজীলে না কুরঅানে নাযিল হইয়াছে। সেই সূরা হচ্ছে সূরা ফাতিহা।


অাল্লাহপাক কোরঅান মাজিদের সব সূরার ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছেন। একটা সূরা একটা নাম অাছে দুটো নাম নেই। কিন্তু অাল্লাহ তায়ালা সূরা ফাতেহার ভিন্ন ভিন্ন ৭ টি নাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যথাঃ


১. ফাতেহাতুল কিতাব

২. সাব উসসানী

৩. উম্মুল কিতাব

৪. উম্মুল কোরঅান

৫. সূরা মাগফেরাত

৬. সূরা রহমত

৭. সূরায়ে ছানিয়া।


এ সূরায় অারবী হরফের (বর্নমালা) ৭ টি হরফ নেই। অার না থাকার ৭টি কারন ও রয়েছে। যথাঃ


১. 'ছে' বা 'ছা' অক্ষরটি এ সূরায় নেই। 'ছে' অক্ষর থেকে 'ছবুর' হয় যার অর্থ ধ্বংস। সূরা ফাতেহা পাঠ কারীর সাথে ধ্বংসের কোনো সম্পর্ক নেই।


২. 'জিম' অক্ষরটি এই সূরায় নেই। জাহান্নামের অাদ্যাক্ষর "জিম"। এই সূরা পাঠকারীর সাথে জাহান্নামের কোনো সম্পর্ক নেই।


৩. "জে" বা "জা" অক্ষরটি "জাক্কুম" শব্দিট লিখতে প্রথমেই ব্যবহার করা হয়। "জাক্কুম" একটা কাঁটাযুক্ত ফল যা দোজখবাসীদের অাহার। অতএব "জাক্কুমের সাথে সূরা ফাতিহা পাঠকারীর সম্পর্ক নেই।


৪. "শিন" দ্বারা শিকাওত বা দুর্ভাগ্য বুজানো হয়।  দুর্ভাগ্যের সাথে এই সূরার সম্পর্ক নেই।


৫. "যোয়া অক্ষরটি ও ফাতেহাতে নেই। কারন যুলমাত বা অন্ধকারের প্রথম অক্ষর " যোয়া"। ফাতেহা পাঠ কারী কখনো অন্ধকারচ্ছন্ন হতে পারে না।


৬. "ফা" সূরা ফাতেহাতে নেই। ফিক্কার বা বিরহ বিচ্ছেদ যার সঙ্গে সূরা ফাতেহা পাঠকারীর সম্পর্ক নেই।


৭. "খা" অক্ষরটি সূরা ফাতেহা মুক্ত। কারন খাওয়ারী শব্দের সঙ্গে খা ব্যবহৃত হয়। যার অর্থ " ভবঘুরে-লম্পট-গৃহহীন" অতএব এমন শব্দের সঙ্গে সূরা ফাতিহা পাঠ কারীর সম্পর্ক থাকতে পারে না।


সূরা ফাতেহার অায়াত সংখ্যা ৭টি। মানুষের দেহে প্রধান ৭টি রগ রয়েছে। যাকে ' হাফাত অান্দাম বা সপ্ত রগ বলে। যে এই ৭টি অায়াত পাঠ করিবে অাল্লাহপাক তার হাফাত অান্দামকে দোখজের অাগুন থেকে রক্ষা করবেন।


এই সূরার অক্ষর সংখ্যা ১২৪টি এবং অাম্বিয়া (অাঃ) গনের সংখ্যাও ১ লক্ষ ২৪ হাজার। 


অালহামদু শব্দটিতে ৫টি অক্ষর এবং ফরজ নামাজ পাঠ করার সময় ও পাঁচ বার। যে ব্যক্তি অালহামদু পাঠ করবে অাল্লাহ তার ঐ ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের ভূল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিবেন।


অার অালহামদুর সাথে লিল্লাহে যোগ করতে মোট ৮ টি অক্ষর হয় অাল্লাহ পাক ৮ টি জান্নাত সৃষ্টি করছেন। যে এই অাট অক্ষর পাঠ করিবে মহান খোদাতায়ালা তার জন্য ৮টি জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত রাখবেন।


"রাব্বুল অালামিন" এখানে ১০ টি অক্ষর। অালহামদুল্লিল্লাহের সাথে রাব্বুল অালামিন যোগ করলে মোট ১৮টি অক্ষর হয়। অাল্লাহ তায়ালা ১৮ হাজার অালম সৃষ্টি করছেন। যে ১৮টি অক্ষর পাঠ করিবে অাল্লাহপাক তাকে ১৮ হাজার অালমের সওয়াব দান করবেন।


"অাররহমান" শব্দটিতে অারবি অক্ষর ৬ টি। পূর্বের অালহামদুল্লিল্লাহে রাব্বিল অালামিনের সাথে "অাররহমানির রাহিমের সংখ্যা যোগ করলে হয় ১৮+৬=২৪ টি। দিনরাত ২৪ ঘন্টায় বিভক্ত। যে ২৪ টি অক্ষর পাঠ করিবে অাল্লাহ পাক তার ২৪ ঘন্টার সকল গোহান মাফ করিয়া দিবেন। 


"অাররাহিম" এখানে অারবি শব্দ সংখ্যা ৬। পূর্বের সংখ্যা ২৪ এর সাথে ৬ যোগ করলে ৩০ হয়। পুলসিরাতের দৈর্ঘ্য ৩০ হাজার বছরের পথ। যে এই ৩০ টি সংখ্যা পাঠ করিবে সে চোখের পলকে পুলসিরাত পাড়ি দিবে।


"মালেকে ইয়াও মিদ্দিন " এখানে অারবী শব্দ সংখ্যা ১২ টি। পূর্বের ৩০ এর সঙ্গে ১২ যোগ করিলে হয় ৪২ অার ১২ গুন করলে অর্থাৎ ৩০*১২=৩৬০ দিন। অাল্লাহপাক তার ১২ মাসেন বা ৩৬০ দিনের গুনাহ মাফ করে দিবেন।


"ইয়াকানাবুদু" এখানে অারবি অক্ষর রয়েছে ৮ টি। পূর্বের ৪২ সঙ্গে ৮ যোগ করিলে হয় ৪২+৮=৫০। হাশরের অাজব ৫০ হাজার বছর ধরে হবে। যে এই ৫০ টি অক্ষর পাঠ করিবে অাল্লাহপাক তাকে হাশরের অাজব থেকে মুক্তি দিবে।


"ওয়া এয়াকানাসতায়ীন" এখানে শব্দ সংখ্যা ১১ টি। ৫০+১১= ৬১। অাল্লাহপাক অাকাশ মাটিতে যত নদ-নদী পয়দা করেছেন তার সমস্ত নদীর পানির সমতুল্য নেক অাল্লাহতায়ালা এই ৬১ টি অক্ষর পাঠকারীর অামলনামায় দিবেন।


"এহদেনাছ ছেরাতাল মুসতাকিম" এখানে অারবী অক্ষর ১৯ টি। ৬১+১৯=৮০।  শরীয়তের বিধান অনুযায়ী মদ্যপানকারীর জন্য ৮০টি বেত্রাঘাতের দন্ড বিধান। যে এই ৮০ অক্ষর পাঠ করিবে অাল্লাহ তার দন্ড মুওকুফ করে দিবেন।


"ছেরাতোয়াল্লাজিনা অান অামতা অালাইহিম গাইরিল মাগদুবে অালাইহিম ওয়ালাদ দোয়া-ল লিন" এখানে অারবি শব্দ সংখ্যা ৪৪ টি।  পূর্বের ৮০+৪৪=১২৪।  যে ব্যক্তি এই ১২৪ টি অক্ষর অর্থাৎ সম্পূর্ন সূরা পাঠ করিবে অাল্লাহপাক ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বর (অাঃ) গনের এবাদতের সওয়াব দান করিবেন।


সূরা ফাতেহা সমস্ত রোগের ঔষুধ স্বরুপ। যে রোগের ঔষুধ নেই সেই রোগের ঔষুধ সূরা ফাতেহা। 

যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের সুন্নাত ও ফরজ নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে ৪১ বার সূরা ফাতেহা পাঠ করে কোনো রুগীর  মুখে ফুঁক দিবে অাল্লাহ তার রোগ মুক্ত করে দিবেন।


বাদশা হারূন-অর- রশিদ যখন মৃত্যু সজ্জায়।  কোনো হেকিম তার রোগ সারাতে পারছিলোনা তখন হযরত খাজা ফুজায়েল (রহঃ) সূরা ফাতেহা ৪১ বার পাঠ করে ফুঁক দিলেন বাদশা ও সুস্থ্য হয়ে উঠলেন।


অাল্লাহপাক তিনার প্রিয় বন্ধু  রাসূল (সাঃ) এবং অামার প্রানের মুর্শিদ বিশ্বওলী হযরত খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃঅাঃ) ছাহেবের খাতিরে অামল করার তৌফিক দান করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন