| | বঙ্গাব্দ

সূফী ও আলেম পর্ব-২

 

সকল সূফীই আলেম। তিঁনার খোদাতত্ত্বজ্ঞানে জ্ঞানী। তিঁনাদের সিনা মুবারক আল্লাহ তায়ালার নূরে ভরপুর। তিঁনারদের কিতাবাদী পড়েই মানুষ আলেম হয়।
সূফী ও আলেম পর্ব-২

সূফীগণের তাহাজ্জুয়ে এত্তেহাদির বলে মানুষ "আল্লাহর দিকে ঘুরে, রাসূল (সাঃ) এঁর মহব্বতে রোদন করে।
সূফীদের খানকা গুলোতে মানুষকে নিরহংকারী হতে শিক্ষা দেয়। সর্বোপরী " মানুষ হতে শিক্ষা দেয়।"
আসুন একজন সূফীর জীবনীর একটু অংশ শুনিঃ
হযরত আবুল হাসান আলী খেরকানী (রঃ) ছাহেব আমাদের এই ছেলছেলার ৭ম পুরুষ ছিলেন। তিনি হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রঃ) ছাহেবের প্রধান খলিফা। সমকালীন সময়ে সমস্ত ওলী-আল্লাহদের ছর্দার ছিলেন।
অথচ তিনি ছিলেন অক্ষরজ্ঞানশূন্য।
যাহাই হোক, লক্ষ লক্ষ লোক তাহার সমীপে বা খেদমতে খোদাপ্রাপ্তিতত্ত্বজ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে উপনীত হইতেন।
একদা এক যুবক আসিয়া তাহার নিকট বাগদাদে যাইয়া হাদীসশাস্ত্র অধ্যয়নের অনুমতি প্রার্থনা করিল। হযরত খেরকানী (রঃ) ছাহেব যুবককে বাগদাদে না যাইয়া বরং খেরকানেরই কোন আলেমের নিকট হইতে হাদীস শাস্ত্রের জ্ঞান আহরণ করিতে পরামর্শ দিলেন। কিন্তু এই পরামর্শ তাহার ভাল লাগিল না। যুবকটি বলিল, "হুজুর! খেরকানে তেমন কোন ভাল মোহাদ্দেস নাই, কিন্তু বাগদাদে বহু বিখ্যাত ও নামকরা মোহাদ্দেস আছে।" ইহা শুনিয়া হযরত খেরকানী (রঃ) ছাহেব চেহারায় বিরক্তিভাব আনিয়া বলিলেন, "আমি তো একজন মুর্খ ও নিরক্ষর লোক। কিন্তু আল্লাহতায়ালা আমাকে সমস্ত দফতরের জ্ঞান দান করিয়াছেন।" যুবকটি জিজ্ঞাসা করিল, "হুজুর, হাদীস শাস্ত্রের জ্ঞান আপনি কাহার নিকট হইতে অর্জন করিয়াছেন?" হযরত খেরকানী (রঃ) ছাহেব বলিলেন, "রাসূলে পাক (সাঃ) হইতে।" কিন্তু এই কথা যুবকের বিশ্বাস হইল না। যুবক বাড়ী চলিয়া গেল। রাত্রিতে যুবক স্বপ্নে দেখিল যে রাসূলে করীম (সাঃ) তাহাকে বলিতেছেন, "হে যুবক! তুমি আবুল হাসান খেরকানীর কথা বিশ্বাস কর নাই কেন? সে ঠিকই বলিয়াছে। সমুদয় হাদীস আমি নিজে তাহাকে শিক্ষা দিয়াছি।" পরবর্তী দিন যুবকটি দ্রুত হযরত খেরকানী (রঃ) ছাহেবের খেদমতে হাজির হইয়া তাঁহার নিকট হইতে হাদীস শিখিবার জন্য আকুতি জানাইল। হযরত খেরকানী (রঃ) ছাহেব যুবকটিকে হাদীস শিখাইতেন। কোন কোন সময় তিনি কোন কোন হাদীস সম্পর্কে বলিতেন, "ইহা হুজুরে আকরাম (সাঃ) এর হাদীস নয়। যুবকটি জিজ্ঞাসা করিত, "হুজুর আপনি ইহা কেমন করিয়া জানিতে পারিলেন? তিনি বলিলেন, তুমি যতক্ষণ হাদীস পড়িতে থাক ততক্ষণ পর্যন্ত আমার কালবী দৃষ্টি থাকে হুজুরে আকরাম (সাঃ) এর ভ্রু-যুগলের প্রতি এবং আমরা যে সকল হাদীস লইয়া আলোচনা করি, রাসূলে করীম (সাঃ) তাহা সমুদয় মনোযোগ সহকারে শুনেন। কখনও কখনও তিনি ভ্রু-কুঞ্চিত করিয়া আমাকে জানাইয়া দেন যে, ইহা তাঁহার হাদীস নয়।"
(গ্রন্থসূত্রঃ হযরত পীর কেবলাজানের পবিত্র নসিহত শরীফ, ১৮তম খন্ড)।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন