| | বঙ্গাব্দ

সূফী ও আলেম পর্ব-১

 

যুগশ্রেষ্ঠ আলেম তাফসিরে কবির শরীফের প্রণেতা প্রখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রহঃ) ছাহেব। তিঁনি তৎকালিন সূফী সাধক হযরত নজিবুদ্দিন কোবরা (রহঃ) ছাহেবের নিকট মুরিদ হইতে গিয়েছিলেন।
সূফী ও আলেম পর্ব-১

গল্পটি শুনুনঃ
• একবার তিনি তিনশত জন জাহেরী বিদ্যায় বিদ্যান ও বিজ্ঞ আলেম লইয়া তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ ওলীয়ে কামেল, হযরত নজীবুদ্দিন কোবরা (রঃ) এর নিকটে মুরীদ হইতে যান। ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) মুরীদ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করিলে হযরত নজিবুদ্দিন কোবরা (রঃ) বলেন, "আমি আপনাকে মুরীদ করিব না, কারণ আপনার নিজের-ই ৩০০ জন খাদেম প্রয়োজন।" হযরত নজিবুদ্দিন কোবরা (রঃ) ফখরুদ্দিন রাজীকে মুরীদ করিলেন না, তবে কিছু উপদেশ প্রদান করিলেন। ফখরুদ্দিন রাজীকে তিনি বলিলেন, "বাবা, আপনাকে মুরীদ করিলাম না। তবে আপনি যদি কখনো কোন বিপদে পড়েন, তাহা হইলে এই ফকিরকে স্মরণ করিবেন।"
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি চলিয়া গেলেন। যখন তাহার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হইল, ধূর্ত শয়তান তাহাকে পথভ্রষ্ট করার শেষ চেষ্টা চালাইল। শয়তানের সাথে ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) এর বিতর্ক শুরু হইলো। ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) আল্লাহর একত্বের উপরে যুক্তি দেখান। শয়তান সে যুক্তিকে খন্ডন করিয়া প্রমাণ করে আল্লাহ এক নয়, একাধিক। এইভাবে চতুর শয়তান ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) এর আল্লাহর একত্বের উপর ব্যক্ত শতাধিক দলিলকে খন্ডন করিয়া দিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) তখন দিশাহারা। এক্ষণে বুঝি বেঈমান হইয়া মরিতে হয়। তিনি মহা বিপদে পতিত হইলেন। হঠাৎ তাহার স্মরণ হইল, তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠতম ওলীয়ে কামেল হযরত নজিবুদ্দিন কোবরা (রঃ) এর সেই উপদেশের কথা, "বিপদে পড়িলে আমাকে স্মরণ করিবে।" তৎক্ষণাৎ ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) হযরত নজিবুদ্দিন কোবরা (রঃ) কে স্মরণ করিয়া বলিলেন, "হে জামানার শ্রেষ্ঠ ওলীয়ে কামেল! আমি আজ মহা বিপদে পতিত। আমাকে এই বিপদ হইতে উদ্ধার করুন। মুরীদ বিপদে পতিত হইয়া পৃথিবীর অপর প্রান্ত হইতেও আপন পীরকে স্মরণ করিলে, এই প্রান্ত হইতেও মুরীদের ডাকে সাড়া দিয়া পীরে কামেল আত্মিকভাবে তাওয়াজ্জুহর হাত বাড়াইয়া বিপদগ্রস্থ মুরীদকে বিপদ হইতে রক্ষা করিতে পারেন। এই ক্ষমতা যাহার নাই, তিনি কামেল মোকাম্মেল পীর নহেন।
ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) এর ডাকে সাড়া দিয়া হযরত নজিবুদ্দিন কোবরা (রঃ) আত্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হইয়া বলিলেন, "হে ফখরুদ্দিন! আপনি শয়তানকে বলুন যে, বিনা দলিলে আল্লাহ এক।" ফখরুদ্দিন রাজী যেইমাত্র বলিলেন, বিনা দলিলে আল্লাহ এক, তখনই শয়তান উপায়ন্তর না দেখিয়া দৌড়াইয়া পালাইল।
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (রঃ) আল্লাহপাকের নিকট প্রার্থনা করিলেন, "হে খোদাতায়ালা! দয়া করিয়া আমাকে কিছুক্ষণ সময় দিন, যাহাতে এই ঘটনাটা আমি প্রকাশ করিয়া যাইতে পারি।" আল্লাহপাক প্রার্থনা কবুল করিলেন। ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রঃ) চক্ষু খুলিয়া দেখিলেন, তাহার চারিপার্শ্বে ৩০০ জন বিজ্ঞ আলেম রহিয়াছে। তিনি তাহাদের নিকট পূর্বাপর সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করিয়া বলিলেন,
مَنْ لَيْسَ لَهُ شَيْخَ فَشَيْخُهُ الشَّيْطَانُ
অর্থাৎ-"যাহার পীর নাই, তাহার পীর শয়তান।"
(গ্রন্থসূত্রঃ পবিত্র নসিহত শরীফ/১৮ তম খন্ড।)
জাহেরী বিদ্যায় আপনি যত বড় পন্ডিত হয় না কেন একজন সূফী সাধকের কাছে আপনি কিছুই না।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) ছাহেবকে মানুষ প্রশ্ন করতো, "আপনি এত বড় বিদ্যান হওয়া সত্ত্বেও হযরত বশির হাফির মত একজন সাধারন মানুষের নিকট কেন যান? উত্তরে তিঁনি বলিতেন, " শরীয়তের জ্ঞানে আমি বিদ্যান হইলেও খোদাতায়ালার জাত পাক সম্পর্কে হযরত বশির হাফি (রহঃ) আমার চেয়ে অধিক অবগত। তাই খোদাতায়ালাকে চিনিবার জন্য আমি বশর হাফি (রহঃ) এরঁ নিকট যাই।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন